প্রশ্ন: অনেক সময় আমরা আল্লাহর নিকটে চেয়েও পাই না। তাহলে কি আল্লাহর নিকট আমাদের চাওয়ার কোন মুল্য নাই?!
উত্তর:
দুআ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দুআতে বান্দার কল্যাণ ছাড়া অন্য কিছু নাই। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা, যথার্থ সম্মানবোধ এবং অজ্ঞতা ও অদূরদৃষ্টির কারণে বাহ্যিকভাবে দুআ কবুল না হতে দেখে হতাশা হয়ে যাই এবং অনেকেই আল্লাহর প্রতি কুধারণা পোষণা করে! তাই বিষয়টি ষ্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
প্রথমত: দুআ একটি স্বতন্ত্র ইবাদত:
আমাদের জানা আবশ্যক যে, দুআ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। এতে আল্লাহ খুশি হন। দুআ না করলে তিনি রাগন্বিত হন। দুআর মাধ্যমে আমাদের ইবাদত ও ছাওয়াব অর্জন হয়, যা আখিরাতের বিশেষ পাথেয় হবে। আল্লাহ চান বান্দারা তার নিকট আরোধনা করুক, দু হাত তুলে কান্নাকাটি করুক। তাই তিনি অনেক আয়াতে বান্দাকে দুআ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন :
{ وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ }
‘হে আমার বান্দারা, তোমরা আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সূরা আল গাফের : ৬০)।
আবূ দাউদ ও তিরমিযীতে সাহাবী নু‘মান ইবনে বাশীরের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে:
الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ
‘দুআই হলো ইবাদত’।
তাই আমাদের উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও আখিরাতে পুরষ্কারে আশায় ইবাদত হিসেবে বেশি বেশি দুআ করা।
❒ দ্বিতীয়ত: আল্লাহর নিকট আমাদের দুআর কি কোন মুল্য নাই?
আল্লাহর নিকট আমাদের দুআর অবশ্যই মুল্য আছে। আর তাই তো দুআ করার উপকারিতা ঘোষণা দেয়া হয়েছে নিম্নোক্ত হাদীসে:
قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو ، لَيْسَ بِإِثْمٍ وَلا بِقَطِيعَةِ رَحِمٍ ، إِلا أَعْطَاهُ إِحْدَى ثَلاثٍ : إِمَّا أَنْ يُعَجِّلَ لَهُ دَعْوَتَهُ ، وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الآخِرَةِ ، وَإِمَّا أَنْ يَدْفَعَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا ، قَالَ : إِذًا يكثرِ ، قَالَ : اللَّهُ أَكْثَرُ
আবু সাঈদ আল-খুদরী রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে কোন মুসলমান ব্যক্তি পাপাচার বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া ব্যতীত যে কোন দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের যে কোন একটি দান করেনঃ
❖(১) হয় দ্রুত তার দোয়া কবুল করেন অথবা
❖(২) তা তার পরকালের জন্য সঞ্চিত রাখেন অথবা
❖(৩) অনুরূপ কোন ক্ষতি তার থেকে অপসারিত করেন। এক ব্যক্তি বললো, তাহলে সে তো অধিক পরিমাণে দোয়া করতে পারে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার চেয়েও অধিক দান করবেন। (তিরমিযী,আহমাদ, হাকিম, তহাবী)
তাই বাহ্যিকভাবে কিছু না পেলেও, দুআ কখনও ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। কারণ তিনি দুআর উপকার থেকে বঞ্চিত করবেন না।
❒ তৃতীয়ত: আল্লাহ কেন দুনিয়াতেই আমাদের সব চাওয়া পূরণ করেন না?
আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার অসীম ভবিষ্যত জ্ঞানের আলোকে জানেন, কোথায় আমাদের কল্যাণ আছে। কেননা তিনিই আমাদের তাকদীর লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি অবশ্যই আমাদের কল্যাণ চান। তিনি তার হেকমত অনুযায়ী আমাদের দুআতে সাড়া দিয়ে থাকেন উপরোক্ত তিনটির যে কোন একটি উপায়ে। তাই কখনো কখনো বান্দার দুনিয়াবী চাওয়া পূরণ না করে এর বিনিময়ে তাকে অনাগত বিপদ থেকে রক্ষা করেন অথবা আখিরাতে তার জন্য অনন্ত পুরস্কার জমা রাখেন যা তার জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কখনো কখনো আমরা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমানের অভাবে ও অজ্ঞতা বশত: দুনিয়াতেই সব চাওয়া-পাওয়া পূরণের জন্য অস্থির হয়ে যাই!
সুতরাং দুআতে হতাশ হওয়া যাবে না বা বিরক্ত হয়ে দুআ পরিত্যাগ করা যাবে না। বরং ধৈর্যের সাথে দুআ করে যেতে হবে।
❒ চতুর্থত: শর্তাবলী ঠিক আছে তো?
অনেক সময় আমরা দুআ করি, কিন্তু দুআর কোন প্রভাব না দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে যাই। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে, দুআর শর্তবলী সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হলে দুনিয়াতে যেমন কোন ফল পাওয়া যাবে না; আখিরাতেও প্রাপ্তির খাতা শুণ্য থাকবে।
দুআ কবুলের শর্তবলী হল, ইখলাস তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুআ করা, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পদ্ধতি অনুসারে দুআ করা এবং হালাল খাবার গ্রহণ করা।
এই সকল শর্তাবলী ঠিক থাকলে ইনশাআল্লাহ দুআ কখনোই বৃথা যাবে না। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব